সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নড়াইলের বড়দিয়ায় ক্লিনিকে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘হাজী খান রওশন আলী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল রবিবার তদন্ত প্রতিবেদ পেয়ে আজ সোমবার ক্লিনিকটি বন্ধ করা হয়ে। এ সময় ক্লিনিকটি অনুমোদনহীন বলেও জানায় তদন্ত কমিটি। এদিকে, মা ও নবজাকের মৃত্যু ঘটনা সাড়ে তিন লাখ টাকায় নিহত শিউলির পরিবারের সঙ্গে রফা করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করে পরিবার।
এর আগে, গত শুক্রবার (৬ মে) চিকিৎসক ছাড়াই অজ্ঞান করতে গিয়ে গর্ভের সন্তানসহ শিউলী বেগম (২৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয় ওই ক্লিনিকে। এ ঘটনা তদন্তে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন নড়াইলের সিভিল সার্জন। গতকাল রবিবার হাসপাতাল পরিদর্শন করে নানা অপচিকিৎসার তথ্য পায় তদন্ত কমিটি। হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক, নার্স এবং অপারেশন থিয়েটারে অজ্ঞান করার যন্ত্র ওটিজি পর্যন্ত নেই বলে জানায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
তদন্ত দলের সদস্য ডা. আব্দুল গনি বলেন, ‘এখানে একজন ডাক্তারের যে ডিগ্রি দেওয়া আছে তা মিথ্যা। মূলত রোগীদের আকৃষ্ট করতে এ ধরনের মিথ্যা পদ এবং ডিগ্রি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘
তদন্ত দলের প্রধান ডা.কাজল মল্লিক বলেন, ‘কে ওই নারীর অপারেশন করেছে তা কেউ জানে না। অন্যদিকে নার্স নেই, চিকিৎসক নেই, অপারেশন থিয়েটারে ওটিজি নেই এভাবে কোনো অপারেশন হতে পারে না। তাই আমরা এই হাসপাতালটি বন্ধের সুপারিশ করছি। ‘
সূত্র জানায়, খাশিয়ালেরর ইউনিয়নের পেচিডুমুরিয়া ইউপি মেম্বর ইমন আলীর সহায়তায় ঘটনার দিক বিকেলে সাড়ে তিন লাখ টাকায় রফা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইমন আলী বলেন, ‘ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক, প্রশাসন সবার পক্ষ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় মীমাংসা করা হয়েছে। ওই দিনে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে মিলাদের জন্য। বাকি তিন লাখ টাকা গতকাল প্রদান করার কথা ছিল। ‘
আজ সোমবার ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে ওই টাকা হস্তান্তর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটি প্রধান ডা. কাজল মল্লিক।
শিউলীর স্বামী জিন্নাত আলী টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘মামলায় গেলে আমার স্ত্রীতে কাটাছেড়া করা হতো। এটা আমি চাইনি। এ ছাড়া আমার চার বছরের ছোট মেয়েটির ভবিষ্যৎ করার জন্য টাকার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। ‘
শিউলীর বাবা খাশিয়াল ইউনিয়নের চৌকিদার আকবর মোল্যা বলেন, ‘আমার মেয়েটি তো চলেই গেছে, তাকে আর টানা হেচড়া করে লাভ কি। তাই আমরা মিটিয়ে ফেলেছি। ‘
তবে টাকা নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ায় ঘটনায় ক্ষুব্ধ নিহত শিউলীর বড়ভাই সবুজ মোল্যা। তিনি বলেন, ‘তাদের টাকা আছে বলে আমার বোনকে হত্যা করে পার পেয়ে গেলো। টাকার জোরে এই ক্লিনিক চলা ঠিক না, আমি এর বিচার চাই। ‘
ক্লিনিক মালিক খান শাহীন সাজ্জাদ পলাশ তদন্তকারী দলের সামনে না এসে মোবাইলে এ ঘটনার জন্য চিকিৎসককে দায়ি করে বলেন, ‘ঘটনা ঘটিয়ে ডা. রাকিব পালিয়েছে। তার বাড়ি গাজীপুরে। তিনি সেখানে চলে গেছেন। ‘
নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আকতার বলেন, এই হাসপাতালে সিজারিয়ানের মত গুরুত্বপূর্ণ অপারেশান মোটেই আইন সিদ্ধ নয়। অনুমোদনহীন ক্লিনিকটিকে থানার সহায়তায় বন্ধ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।